আরাফা দিন: মুসলিম উম্মাহর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও বরকতময় দিন
আরাফা দিবস কী ?
আরাফা দিবস হলো হিজরি বছরের ৯ জিলহজ, যেদিন হজ পালনকারীরা মক্কার নিকটবর্তী আরাফার ময়দানে জড়ো হন। এই দিনটি ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিন। হাদীস ও কুরআনের আলোকে এটি একটি পবিত্র, ক্ষমার দিন, রহমতের দিন এবং ইবাদতের শ্রেষ্ঠ সময়।
কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী এর ফজিলত
কুরআন এ বলছে:
"আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণ করেছি..."
(সূরা আল-মায়েদা, ৫:৩)
এই আয়াতটি আরাফার দিনেই অবতীর্ণ হয়। অর্থাৎ ইসলাম এই দিনেই পূর্ণতা লাভ করে।
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন:
“হজ মানেই আরাফা।” (তিরমিজি)
“আরাফার দিনের রোজা বিগত এক বছর এবং আগামি এক বছরের গুনাহ মাফ করে।” (মুসলিম)
“এই দিনে আল্লাহ সবচেয়ে বেশি মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন।” (মুসলিম)
বাড়ি থেকে আমরা কী কী করতে পারি এই দিনে?
যাঁরা হজে যাননি, তাঁরা ঘরে বসেই এই পবিত্র দিনটি ইবাদতের মাধ্যমে কাটিয়ে মহান সওয়াব অর্জন করতে পারেন। নিচে ধাপে ধাপে বলা হলো:
১. আরাফার দিনের রোজা রাখা (সুন্নত)
যারা হজে নেই, তাদের জন্য এই রোজা রাখা সুন্নত।
এটি এক বছর আগের এবং এক বছর পরের গোনাহ মাফের কারণ।
২. তাওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা
আল্লাহর কাছে কাঁদো কাঁদোভাবে নিজের গোনাহ মাফ চাওয়া।
সেজদায় পড়ে গিয়ে গোপনে গোপনে তাওবা করা।
৩. জিকির ও দোয়া
এই দিন বেশি বেশি পড়ুন:
"لا إله إلا الله وحده لا شريك له، له الملك وله الحمد، وهو على كل شيء قدير"
তাসবিহ, তাহমিদ, তাকবির, তাহলীল বেশি করে বলা।
৪. কুরআন তিলাওয়াত
অন্তত এক পারা কুরআন তিলাওয়াত করুন।
অর্থ সহ পড়লে হৃদয়ে গভীর প্রভাব পড়ে।
৫. নফল নামাজ পড়া
সালাতুত তওবা, সালাতুল হাযাহ্ (চাহিদার নামাজ), তাহাজ্জুদ, দোহা নামাজ।
নফল ইবাদত এই দিনে অনেক গুণ বেশি সওয়াব অর্জনের সুযোগ।
৬. পরিবারকে সম্পৃক্ত করা
পরিবারকে নিয়ে মিলেমিশে দোয়া ও ইবাদতে সময় দিন।
ছোটদের শেখান এই দিনের গুরুত্ব।
৭. দান-সদকা
অসহায়, গরিব, প্রতিবেশীদের সাহায্য করুন।
আরাফার দিনে দান করলে তা বহুগুণ বেশি সওয়াব হয়।
রাসূলুল্লাহ ﷺ কীভাবে এই দিন পালন করেছেন?
হজের সময় তিনি আরাফার ময়দানে ছিলেন, দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে দোয়া করেছেন।
উম্মতের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন।
তিনি রোজা রাখেননি হজে থাকার কারণে, কিন্তু হজে না থাকলে রোজা রাখতে উৎসাহ দিতেন।
উপসংহার: আমরা কী শিখলাম?
আরাফার দিন নিশ্চিতভাবে আমাদের হাতে রয়েছে, যা লাইলাতুল কদরের মতো গোপন নয়।
এটি ক্ষমার দিন, মুক্তির দিন, বরকতের দিন।
ঘরে বসে এই দিন রোজা, নামাজ, দোয়া, কুরআন, জিকির, দানসহ বহু ইবাদত করে আমরা বিশাল সওয়াব অর্জন করতে পারি।
আমাদের কাজ:
রোজা রাখা, দোয়া ও তাওবা করা, কুরআন পড়া, দান-সদকা করা, গুনাহ থেকে নিজেকে দূরে রাখা
আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই পবিত্র আরাফা দিবসের ফজিলত বুঝে আমল করার তাওফিক দিন। আমিন।
✍ লেখক: একজন সাধারন মুসলমান