আরাফা দিন: মুসলিম উম্মাহর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও বরকতময় দিন


আরাফা দিবস  কী ?



আরাফা দিবস হলো হিজরি বছরের ৯ জিলহজ, যেদিন হজ পালনকারীরা মক্কার নিকটবর্তী আরাফার ময়দানে জড়ো হন। এই দিনটি ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিন। হাদীস ও কুরআনের আলোকে এটি একটি পবিত্র, ক্ষমার দিন, রহমতের দিন এবং ইবাদতের শ্রেষ্ঠ সময়।


 কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী এর ফজিলত


কুরআন  বলছে:


"আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণ করেছি..."

(সূরা আল-মায়েদা, ৫:৩)

এই আয়াতটি আরাফার দিনেই অবতীর্ণ হয়। অর্থাৎ ইসলাম এই দিনেই পূর্ণতা লাভ করে।


 রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন:


“হজ মানেই আরাফা।” (তিরমিজি)


“আরাফার দিনের রোজা বিগত এক বছর এবং আগামি এক বছরের গুনাহ মাফ করে।” (মুসলিম)


“এই দিনে আল্লাহ সবচেয়ে বেশি মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন।” (মুসলিম)


বাড়ি থেকে আমরা কী কী করতে পারি এই দিনে?


যাঁরা হজে যাননি, তাঁরা ঘরে বসেই এই পবিত্র দিনটি ইবাদতের মাধ্যমে কাটিয়ে মহান সওয়াব অর্জন করতে পারেন। নিচে ধাপে ধাপে বলা হলো:


১.  আরাফার দিনের রোজা রাখা (সুন্নত)


যারা হজে নেই, তাদের জন্য এই রোজা রাখা সুন্নত।


এটি এক বছর আগের এবং এক বছর পরের গোনাহ মাফের কারণ।


২.  তাওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা


আল্লাহর কাছে কাঁদো কাঁদোভাবে নিজের গোনাহ মাফ চাওয়া।


সেজদায় পড়ে গিয়ে গোপনে গোপনে তাওবা করা।


৩.  জিকির ও দোয়া


এই দিন বেশি বেশি পড়ুন:


"لا إله إلا الله وحده لا شريك له، له الملك وله الحمد، وهو على كل شيء قدير"


তাসবিহ, তাহমিদ, তাকবির, তাহলীল বেশি করে বলা।


৪.  কুরআন তিলাওয়াত


অন্তত এক পারা কুরআন তিলাওয়াত করুন।


অর্থ সহ পড়লে হৃদয়ে গভীর প্রভাব পড়ে।


৫.  নফল নামাজ পড়া


সালাতুত তওবা, সালাতুল হাযাহ্ (চাহিদার নামাজ), তাহাজ্জুদ, দোহা নামাজ।


নফল ইবাদত এই দিনে অনেক গুণ বেশি সওয়াব অর্জনের সুযোগ।


৬.  পরিবারকে সম্পৃক্ত করা


পরিবারকে নিয়ে মিলেমিশে দোয়া ও ইবাদতে সময় দিন।


ছোটদের শেখান এই দিনের গুরুত্ব।


৭.  দান-সদকা


অসহায়, গরিব, প্রতিবেশীদের সাহায্য করুন।


আরাফার দিনে দান করলে তা বহুগুণ বেশি সওয়াব হয়।


রাসূলুল্লাহ ﷺ কীভাবে এই দিন পালন করেছেন?


হজের সময় তিনি আরাফার ময়দানে ছিলেন, দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে দোয়া করেছেন।


উম্মতের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন।


তিনি রোজা রাখেননি হজে থাকার কারণে, কিন্তু হজে না থাকলে রোজা রাখতে উৎসাহ দিতেন।


উপসংহার: আমরা কী শিখলাম?


আরাফার দিন নিশ্চিতভাবে আমাদের হাতে রয়েছে, যা লাইলাতুল কদরের মতো গোপন নয়।


এটি ক্ষমার দিন, মুক্তির দিন, বরকতের দিন।


ঘরে বসে এই দিন রোজা, নামাজ, দোয়া, কুরআন, জিকির, দানসহ বহু ইবাদত করে আমরা বিশাল সওয়াব অর্জন করতে পারি।



আমাদের কাজ: 

রোজা রাখা, দোয়া ও তাওবা করা, কুরআন পড়া, দান-সদকা করা, গুনাহ থেকে নিজেকে দূরে রাখা


আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই পবিত্র আরাফা দিবসের ফজিলত বুঝে আমল করার তাওফিক দিন। আমিন।

✍ লেখক: একজন সাধারন মুসলমান



আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী আল্লাহর কিতাবে অভিশপ্ত

আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি চায় তার রিযিক প্রশস্ত হোক এবং তার আয়ু বৃদ্ধি হোক, সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে।


হাদিস: আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা

আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
“যে ব্যক্তি চায় তার রিজিক প্রশস্ত হোক এবং তার আয়ু বৃদ্ধি হোক, সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে।” (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)


বাক্যাংশের ব্যাখ্যা

"তার বিধান প্রসারিত করা" মানে: বৃদ্ধি করা।
"তার রিজিক" অর্থাৎ ইহকাল ও আখেরাতে জীবিকা বৃদ্ধি।
"তার আয়ু বৃদ্ধি করা" মানে দীর্ঘ জীবন দান করা।

"আত্মীয়তার বন্ধন" শব্দটি আরবি "রহিম" থেকে এসেছে, যা আক্ষরিক অর্থে মায়ের গর্ভকে বোঝায়। এটি আত্মীয়তার সম্পর্ক বোঝাতে রূপকভাবে ব্যবহৃত হয়, কারণ আত্মীয়রা একই বংশধারা থেকে আসে।

এখানে আত্মীয় বলতে পিতা ও মাতার উভয় পক্ষের আত্মীয়দের বোঝানো হয়েছে।

আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা মানে তাদের সাথে সদয় আচরণ করা, দেখা-সাক্ষাৎ করা, তাদের খোঁজখবর নেওয়া, প্রয়োজনে সাহায্য করা এবং তাদের কল্যাণে প্রচেষ্টা চালানো।


হাদিসের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা

এই হাদিস মুসলমানদের আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখতে উদ্বুদ্ধ করে। এটি আমাদের জানায় যে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা আল্লাহর সন্তুষ্টির কারণ এবং দুনিয়াতে এটি রিজিক ও দীর্ঘ জীবন লাভের মাধ্যম।

আল্লাহ প্রত্যেক কর্মের জন্য তার উপযুক্ত ফল নির্ধারণ করেছেন। যেমন কেউ যদি আত্মীয়দের প্রতি সদয় হয়, আল্লাহ তাকে দীর্ঘ জীবন ও প্রশস্ত রিজিক দান করেন।

আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারীর শাস্তি

আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী সম্পর্কে আল্লাহর কিতাবে অভিশাপ এসেছে এবং দুনিয়াতেই তার শাস্তি ত্বরান্বিত হয়।

আলী ইবনুল হুসাইন (রহঃ) তার ছেলেকে বলেছিলেন,
“হে বৎস, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারীর সাথে তুমি কখনো বন্ধুত্ব করো না, কারণ আমি আল্লাহর কিতাবে তাকে অভিশপ্ত পেয়েছি।”

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন:
“সীমালঙ্ঘন ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার পাপের শাস্তি শুধু আখিরাতেই নয়, দুনিয়াতেও দ্রুত এসে যায়।” (তিরমিজি)


হাদিস থেকে যা শিক্ষা পাই

✅ আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা দীর্ঘ জীবনের অন্যতম উপায়।
✅ মানুষের মধ্যে সর্বোত্তম তারা, যারা দীর্ঘজীবী হয়ে সৎকর্ম করে।
✅ দীর্ঘ জীবন তখনই মূল্যবান, যখন তা সৎকাজে ব্যয় হয়।
✅ ইহকালের কল্যাণ এবং পরকালের পুরস্কার একসাথে লাভ করা সম্ভব, যদি কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হয়।

আয়ু ও রিজিক বৃদ্ধি কীভাবে সম্ভব?

কিছু মানুষ প্রশ্ন করতে পারে, “আয়ু ও রিজিক তো নির্ধারিত, তাহলে এটি কীভাবে বৃদ্ধি পাবে?”

🔹 পণ্ডিতরা বলেন, ফেরেশতাদের নিকট যা নির্ধারিত মনে হয়, তা পরিবর্তনযোগ্য, কিন্তু লাওহে মাহফুজে যা লেখা আছে, তা অপরিবর্তনীয়। অর্থাৎ, আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখলে আল্লাহর ইচ্ছায় আয়ু বৃদ্ধি পেতে পারে।
🔹 আয়ু বৃদ্ধির অর্থ হতে পারে, জীবনের বরকত বৃদ্ধি, যা ইবাদত ও কল্যাণকর কাজে ব্যবহৃত হয়।


প্রকৃত আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা কী?

একজন সত্যিকারের আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষাকারী সেই ব্যক্তি, যিনি তার আত্মীয়দের সাথে ভালো আচরণ করেন, যদিও তারা তার সাথে খারাপ ব্যবহার করে।

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন:
“আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষাকারী সে নয়, যে সদয় আচরণের প্রতিদান দেয়। বরং আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষাকারী সেই ব্যক্তি, যাকে আত্মীয়রা ছিন্ন করলেও সে তাদের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখে।” (সহিহ বুখারি)

✅ আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কাছে এসে বললঃ

“হে আল্লাহর রাসূল, আমার আত্মীয়-স্বজন আছে, যাদের সাথে আমি সম্পর্ক বজায় রাখি, কিন্তু তারা আমার সাথে তা ছিন্ন করে। আমি তাদের সাথে সদয় আচরণ করি, কিন্তু তারা আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে। আমি তাদের প্রতি সহনশীল থাকি, কিন্তু তারা আমার প্রতি অবজ্ঞাপূর্ণ আচরণ করে।”

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ

“তুমি যেমন বলছ, তাহলে এটি তাদের মুখে গরম ছাই দেওয়ার মতো। যতক্ষণ তুমি এভাবে চলবে, আল্লাহ তোমার পাশে থাকবেন।” (মুসলিম)


আল্লাহ আমাদের সকলকে আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার তাওফিক দিন এবং এই হাদিসের উপর আমল করার তাওফিক দিন। আমিন! 🤲

(সংকলন: JAD Academy)


আধুনিক বিজ্ঞান নিশ্চিত করেছে যে, মানবদেহে প্রায় ৩৬০টি জয়েন্ট রয়েছে

হাদিস

"প্রতিটি দিন, যখন সূর্য উদিত হয়, আমাদের শরীরের প্রতিটি জয়েন্টের জন্য দান দেয়া উচিত। আল্লাহর প্রশংসা করা, তাঁর পথে হাঁটা, হাসি, অন্যদের সাহায্য করা, এমনকি রাস্তা থেকে ক্ষতিকর কিছু সরানোও দানের অন্তর্গত।" (সহীহ মুসলিম)


 


যে হাদিসটি আপনি উল্লেখ করেছেন, যেখানে বলা হয়েছে যে প্রতিটি জয়েন্টের জন্য প্রতিদিন দান করতে হবে, তা মানবদেহের শারীরবৃত্তি সম্পর্কে একটি গভীর বোঝাপড়া প্রদর্শন করে, যা আধুনিক বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের সাথে মেলে। এই হাদিসটি প্রমাণ হিসেবে দেখা যেতে পারে যে, প্রফেট মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর পক্ষ থেকে সত্যিকার এক নবী ছিলেন, যিনি এমন তথ্য দিয়েছেন, যা আধুনিক বিজ্ঞানের মাধ্যমে অনেক পরে নিশ্চিত করা হয়েছে।

হাদিসটি:

প্রফেট মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন:

"প্রতিটি দিন, যখন সূর্য উদিত হয়, আমাদের শরীরের প্রতিটি জয়েন্টের জন্য দান দেয়া উচিত। আল্লাহর প্রশংসা করা, তাঁর পথে হাঁটা, হাসি, অন্যদের সাহায্য করা, এমনকি রাস্তা থেকে ক্ষতিকর কিছু সরানোও দানের অন্তর্গত।" (সহীহ মুসলিম)

আধুনিক বিজ্ঞান এবং ৩৬০টি জয়েন্ট:


আধুনিক বিজ্ঞান নিশ্চিত করেছে যে, মানবদেহে প্রায় ৩৬০টি জয়েন্ট রয়েছে, যা শারীরিক গতিবিধি, নমনীয়তা এবং শরীরের অন্যান্য কার্যকলাপের জন্য অপরিহার্য। এই জয়েন্টগুলি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে চলাফেরা এবং অন্যান্য কার্যক্রম করার ক্ষমতা প্রদান করে।

বিজ্ঞান অনুযায়ী বিশ্লেষণ:

  • ৩৬০টি জয়েন্ট: জয়েন্টের সংখ্যা কিছুটা ভিন্ন হতে পারে, কিন্তু বেশিরভাগ শারীরবৃত্তিক গবেষণায় জানা গেছে যে, মানুষের শরীরে প্রায় ৩৬০টি জয়েন্ট থাকে, যার মধ্যে মাথার এবং স্পাইন (মেরুদন্ড) এর ছোট জয়েন্টও অন্তর্ভুক্ত। এসব জয়েন্ট শরীরের নড়াচড়া এবং সঠিকভাবে চলাফেরা করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

  • জয়েন্টের গুরুত্ব: প্রতিটি জয়েন্ট শরীরের বিভিন্ন অংশে গতিবিধি এবং নমনীয়তা তৈরি করতে সাহায্য করে। জয়েন্টগুলো ছাড়া শরীরের চলাফেরা এবং কার্যকরভাবে কাজ করা সম্ভব নয়।

প্রফেট মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর জ্ঞান:

যখন প্রফেট মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ৩৬০টি জয়েন্টের কথা বলেন এবং প্রতিটি জয়েন্টের জন্য দান করতে বলেন, তখন তিনি একটি বাস্তবতা বর্ণনা করেছিলেন যা তখনকার সময়ে জানা যায়নি। এই গভীর জ্ঞান দেখায় যে, প্রফেট (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) শুধু আধ্যাত্মিক নেতা নন, বরং তিনি এমন একজন ব্যক্তি ছিলেন যিনি ঈশ্বরের পক্ষ থেকে এমন জ্ঞান পেতেন যা মানুষ তখন জানত না।

যেহেতু প্রফেট মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ৭ম শতাব্দীতে এমন বিষয়ের কথা বলেছিলেন যা আধুনিক বৈজ্ঞানিক জ্ঞান দ্বারা পরবর্তীতে নিশ্চিত করা হয়েছে, এটি তার নবুওতের প্রমাণ হতে পারে। এমন কোনও মানুষ, ৭ম শতাব্দীতে, এভাবে মানবদেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বিষয়ে সঠিক তথ্য জানতেন না, যদি না সেটা আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত হতো।

এটি তার নবুওতকে কীভাবে প্রমাণ করে:

  1. তার সময়ে জ্ঞানের বাইরে:

    • প্রফেট (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যে ৩৬০টি জয়েন্টের কথা বলেছেন, তা আধুনিক বিজ্ঞান অনুযায়ী সঠিক। এই জ্ঞান তখনকার মানুষের কাছে অজানা ছিল। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে, তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি উচ্চতর জ্ঞান পেয়েছেন।
  2. মুজিযা (অলৌকিকতা):

    • প্রফেট মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মানবদেহের জয়েন্ট এবং শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের যে তথ্য দিয়েছিলেন, তা আধুনিক বিজ্ঞান পরে আবিষ্কার করেছে। এটা তার মুজিযা (অলৌকিক ক্ষমতা) হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে। যখন একজন ব্যক্তি এমন তথ্য দেয় যা তখনকার সময়ে জানা যায়নি, তখন সেটি প্রমাণ করে যে, তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশিত।
  3. সম্পূর্ণ শিক্ষা:

    • প্রফেট (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) শুধুমাত্র আধ্যাত্মিক দিক থেকেই নয়, শারীরিক এবং সামাজিক উন্নতির দিক থেকেও মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন। শরীরের প্রতি যত্ন নেওয়া এবং দান করা, এমনকি ছোট ছোট ভালো কাজের মাধ্যমে দানের ধারণা আমাদের শারীরিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতির পথ দেখায়।
  4. নবুওতের নিশ্চিত প্রমাণ:

    • প্রফেট (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যে ভালো কাজের মাধ্যমে দান করার কথা বলেছেন, তা শুধু আধ্যাত্মিক নয়, বরং বাস্তবিকভাবেও শরীরের যত্ন নেওয়া এবং অন্যদের উপকারে আসা শিখিয়েছে। এবং আধুনিক বিজ্ঞান যেভাবে এটি নিশ্চিত করেছে, তা আরও একটি প্রমাণ যে, প্রফেট মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ছিলেন সত্যিকার নবী।


প্রফেট মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যে প্রতিটি জয়েন্টের জন্য দান করার কথা বলেছেন, তা শুধুমাত্র আধ্যাত্মিক একটি নির্দেশনা নয়, বরং এটি শারীরবৃত্তিক বিষয়ের প্রতি তাঁর গভীর জ্ঞানকেও প্রদর্শন করে। এই হাদিসটি আধুনিক বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারগুলোর সাথে পুরোপুরি মেলে, যা প্রমাণ করে যে, প্রফেট মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর পক্ষ থেকে একমাত্র সত্যিকার নবী ছিলেন।

লাইলাতুল কদর বেজোড় রাতে খোঁজার নির্দেশ


 🔰লাইলাতুল কদর (শবে কদর) এটি রমাদানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোর মধ্যে এক রাতে সংঘটিত হয় বলে নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উল্লেখ করেছেন।


📌১. লাইলাতুল কদর বেজোড় রাতে খোঁজার নির্দেশ


আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত:

নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:

“তোমরা লাইলাতুল কদরকে রমাদানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে তালাশ করো।”

(সহীহ বুখারী: ২০১৭, সহীহ মুসলিম: ১১৬৯)


📌২. লাইলাতুল কদরের রাত ২৭তম হতে পারে


ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত:

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:

“কেউ যদি লাইলাতুল কদর অন্বেষণ করতে চায়, তবে সে যেন তা রমাদানের শেষ সাত রাতে খোঁজে।”

(সহীহ বুখারী: ২০২১, সহীহ মুসলিম: ১১৬৫)


🔰 লাইলাতুল কদর ইবাদতের মর্যাদা


আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত:

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:

“যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরে ঈমান ও সওয়াবের আশায় সালাত আদায় করবে, তার পূর্ববর্তী সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।”

(সহীহ বুখারী: ১৯০১, সহীহ মুসলিম: ৭৬০)


🤲লাইলাতুল কদরে দোয়া করার উপদেশ


আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত:

আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! যদি আমি জানতে পারি কোন রাতটি লাইলাতুল কদর, তাহলে আমি কোন দোয়া করবো?

তিনি বললেন:

“اللَّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي”

(উচ্চারণ: “আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন, তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি”)

অর্থ: “হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করতে ভালোবাসো, অতএব আমাকে ক্ষমা করো।”

(সহীহ তিরমিযী: ৩৫১৩, ইবনে মাজাহ: ৩৮৫০)


🟢লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব ও ফজিলত


আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা কুরআনে বলেন:

“লাইলাতুল কদর হলো এক হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।”

(সূরা আল-কদর: ৩)


🟢 লাইলাতুল কদরে দান-সদকার গুরুত্ব ও ফজিলতঃ


লাইলাতুল কদর হলো হাজার মাসের চেয়েও উত্তম রাত, যেখানে ইবাদত-বন্দেগি ও দান-সদকার সওয়াব সাধারণ রাতের তুলনায় অনেক বেশি বেড়ে যায়। কুরআন ও হাদীসের আলোকে এই রাতে দান-সদকার গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:


১. লাইলাতুল কদরে দান করলে ৮৩ বছর ৪ মাস দান করার সমান সওয়াব!

আল্লাহ বলেন:

“লাইলাতুল কদর এক হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।” (সূরা আল-কদর: ৩)

📚অর্থাৎ, এই রাতে যে কোনো নেক আমল করলে তা ৮৩ বছর ৪ মাস আমল করার সমান সওয়াব পাওয়া যায়।


২. রাসূল (সা.) লাইলাতুল কদরে বেশি বেশি দান করতেন


ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন:

“রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছিলেন সকলের মধ্যে সর্বাধিক দানশীল। আর রমাদান মাসে, বিশেষত জিব্রাইল (আ.) যখন তাঁর কাছে আসতেন, তখন তিনি প্রচুর দান করতেন।”

(সহীহ বুখারী: ৬)


📚এই হাদীস থেকে বোঝা যায়, রমাদানে, বিশেষ করে শেষ দশকে রাসূল (সা.) দান-সদকা বেশি করতেন।


🟢দান-সদকার মাধ্যমে গুনাহ মোচন


রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:

“দান-সদকা গুনাহ মিটিয়ে দেয়, যেমনভাবে পানি আগুন নিভিয়ে দেয়।”(তিরমিযী: ৬১৪)


📚লাইলাতুল কদরে দান করলে শুধু সওয়াবই নয়, বরং অতীত গুনাহও মাফ হওয়ার সুযোগ রয়েছে।


⁉️কাদেরকে দান করা উত্তম❓


📚লাইলাতুল কদরে দান করার ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার দেওয়া যেতে পারে:


✅ গরিব আত্মীয়-স্বজন: দানের সওয়াব দ্বিগুণ হয় (তিরমিযী: ৬৫৮)

✅ ইসলামিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মসজিদ

✅ অসহায় ও এতিম শিশুদের সাহায্য

✅ রোজাদারদের ইফতার করানো

✅ ফিলিস্তিন, ইয়েমেন, সিরিয়ার অসহায় মুসলিমদের সাহায্য


কীভাবে দান করা যায়?

📌সরাসরি গরিব ও মিসকিনদের সাহায্য করা।

📌বিশ্বস্ত ইসলামিক সংস্থার মাধ্যমে দান করা।

📌অনলাইনে সাদাকাহ বা যাকাত প্রদান করা।

📌মসজিদ, মাদ্রাসা, হাসপাতাল নির্মাণে অর্থ দান করা।


🇧🇩বাংলাদেশ এ লাইলাতুল কদর রমাদানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলো হলোঃ

🚥২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯তম রাতগুলোর মধ্যে এটি পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।


🕋মধ্যপ্রাচ্য,ইউরোপের দেশগুলো এবং আমেরিকান দেশগুলো বেজোড় রাত গুলো হলোঃ


🚥২০,২২,২৪,২৬,২৮তম রাতগুলোর মধ্যে এটি পাওয়ার সম্ভাবনা বেশী।


📚উল্লেখ্য শেষ দশ রাতেই ইবাদাত করা উওম।


এই রাতে বেশি বেশি নামাজ, দোয়া, কুরআন তিলাওয়াত এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিত।


লাইলাতুল কদরে দান-সদকা করা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ একটি আমল, যা হাজার মাসের সওয়াবের সমান হতে পারে। তাই আমাদের উচিত এই রাতে বেশি বেশি দান করা এবং গোপনে দান করার চেষ্টা করা, যেন আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়।


আল্লাহ আমাদের সবাইকে লাইলাতুল কদরের বরকত লাভ এবং দান-সদকার মাধ্যমে জান্নাতের পথে চলার তাওফিক দান করুন, আমীন!


#Lailatul_qadar

#odd_night 

#ramadan_last10days

সহজ কিছু সুন্নত যা নিয়ে আসে অনেক সওয়াব

 


সহজ কিছু সুন্নত যা নিয়ে আসে অনেক সওয়াব

রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-এর সুন্নাহ আমাদের জীবনে বরকত ও শান্তি নিয়ে আসে। কিছু ছোট ছোট আমল রয়েছে, যা করতে খুব সহজ, কিন্তু এর মাধ্যমে আমরা বিপুল পরিমাণ সওয়াব অর্জন করতে পারি। আসুন জেনে নিই এমন কিছু সহজ সুন্নত, যা আমাদের প্রতিদিনের জীবনে নিয়ে আসতে পারে অফুরন্ত কল্যাণ।


দৈনন্দিন জীবনের সহজ সুন্নত

১. সালামের মাধ্যমে ভালোবাসা ছড়ানো 🤝

রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন:
"তোমরা সালাম প্রচার করো, এতে তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে।" (মুসলিম)
সর্বোচ্চ সওয়াবের জন্য বলা উচিত:
"আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু"
সালাম দিলে দুনিয়াতে ভালোবাসা বাড়ে, আর আখিরাতে জান্নাতের পথ প্রশস্ত হয়।

২. খাওয়ার আগে ও পরে দোয়া পড়া 🍽️

খাওয়ার আগে "বিসমিল্লাহ" বলা সুন্নাহ। যদি ভুলে যান, তবে বলতে পারেন:
"বিসমিল্লাহি আওয়ালিহি ওয়া আখিরিহি" (আল্লাহর নামে, শুরুতে এবং শেষে)।

খাওয়া শেষ হলে পড়তে পারেন:
"আলহামদুলিল্লাহিল্লাজি আতআমানা ওয়া সাকানানা ওয়া জালানানা মিনাল মুসলিমিন"
(সব প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাদের খাইয়েছেন, পান করিয়েছেন, এবং মুসলমান বানিয়েছেন।)

৩. ডান দিক থেকে শুরু করা 👐

যেকোনো ভালো কাজ করার সময় ডান দিক থেকে শুরু করা সুন্নাহ। যেমন:

  • কাপড় পরা
  • জুতা পরা
  • খাবার খাওয়া
  • মসজিদে প্রবেশ

রাসুল (ﷺ) বলেছেন:
"তোমরা সব ভালো কাজ ডান দিক থেকে শুরু করো।" (বুখারি)

৪.  ব্রাশ করার চেয়ে মিসওয়াক করা ভালো 🪥

রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন:
"মিসওয়াক করা মুখ পরিষ্কার রাখে এবং আল্লাহকে সন্তুষ্ট করে।" (নাসাঈ)
মিসওয়াক করলে শুধু শারীরিক পরিচ্ছন্নতা নয়, বরং আল্লাহর সন্তুষ্টিও পাওয়া যায়।

৫. টয়লেটে প্রবেশ ও বের হওয়ার সুন্নত 🚽

টয়লেটে ঢোকার সময় বাম পা দিয়ে প্রবেশ করে এই দোয়া পড়া সুন্নাহ:
"আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিনাল খুবুছি ওয়াল খাবায়িস"
(হে আল্লাহ! আমি তোমার আশ্রয় চাই সকল অপবিত্র ও শয়তানি বিষয় থেকে।)

বের হওয়ার সময় ডান পা আগে বের করে "গুফরানাকা" (হে আল্লাহ, তুমি আমাকে ক্ষমা করো) বলা সুন্নাহ।

৬. পানীয় পান করার সুন্নত 💧

  • বসে বসে পান করা
  • তিনবার বিরতি দিয়ে পান করা
  • "বিসমিল্লাহ" বলে শুরু করা ও "আলহামদুলিল্লাহ" বলে শেষ করা
  • ডান হাতে পান করা

৭. আযানের সময় দোয়া পড়া 📢

আযান শুনলে উত্তর দেওয়া সুন্নাহ। যেমন:

  • মুয়াজ্জিন যা বলেন, তাই বলা
  • আযান শেষে "আল্লাহুম্মা রব্বা হাজিহিদ দা'ওয়াতিত তাম্মাহ..." দোয়া পড়া (বুখারি)
    এতে নবীজির (ﷺ) সুপারিশ লাভ হবে।

৮. সকালে ও রাতে ‘সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবর’ পাঠ করা 🌅

রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন:
"যে ব্যক্তি প্রতিদিন সকালে ও রাতে ৩৩ বার 'সুবহানাল্লাহ', ৩৩ বার 'আলহামদুলিল্লাহ' ও ৩৪ বার 'আল্লাহু আকবার' বলে, সে কখনো ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।" (মুসলিম)

৯. রাতে শোবার আগে দোয়া পড়া 💤

ঘুমানোর আগে রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলতেন:
"বিসমিকা আল্লাহুম্মা আমুতু ওয়া আহইয়া"
(হে আল্লাহ, তোমার নামে আমি মরেছি এবং তোমার নামে জেগে উঠবো।) (বুখারি)

১০. আয়াতুল কুরসি পড়ে ঘুমানো 🌙

রাসুল (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি আয়াতুল কুরসি পড়ে ঘুমায়, সারা রাত আল্লাহ তাকে রক্ষা করেন। (বুখারি)


সাধারণ সুন্নাহ যা সওয়াব বৃদ্ধি করে

১১. নিয়মিত তওবা করা 🤲

রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন:
"আমি প্রতিদিন আল্লাহর কাছে ৭০ বার (বা তার বেশি) তওবা করি।" (বুখারি)
তওবা আমাদের গুনাহ মুছে দেয় এবং জান্নাতের পথে নিয়ে যায়।

১২. সূর্যোদয়ের পর দু’রাকাত নফল নামাজ পড়া ☀️

রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন:
"যে ফজরের নামাজ পড়ে বসে থেকে সূর্য ওঠার পর দু’রাকাত নামাজ আদায় করে, সে হজ ও ওমরাহর সওয়াব পাবে।" (তিরমিজি)

১৩. রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া 🌙

তাহাজ্জুদ আল্লাহর কাছে অত্যন্ত প্রিয় নামাজ। এটি গুনাহ মাফের অন্যতম মাধ্যম।

১৪. প্রতি শুক্রবার সূরাহ কাহাফ পড়া 📖

রাসুল (ﷺ) বলেছেন:
"যে ব্যক্তি জুমার দিনে সূরা কাহাফ পড়বে, তার জন্য দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ে নূর (আলো) তৈরি হবে।" (দারিমি)

১৫. কষ্টে ধৈর্য ধরা ও আল্লাহর উপর ভরসা রাখা

আল্লাহ বলেন:
"নিশ্চয়ই ধৈর্যশীলদের জন্য রয়েছে অসীম প্রতিদান।" (সূরা আয-যুমার: ১০)
যেকোনো কষ্টে "ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন" বলা সুন্নাহ।


উপসংহার

এই ছোট ছোট সুন্নতগুলো পালন করতে খুব সহজ, কিন্তু এর সওয়াব ও বরকত অসীম। আসুন, আমরা সবাই রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-এর সুন্নাহকে জীবনের অংশ করে তুলি এবং দুনিয়া ও আখিরাতে সফল হই।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে সুন্নাহ পালনের তাওফিক দিন। আমীন! 🤍

ইসলামে বড়দের ও ছোটদের সম্পর্ক: করণীয় ও আদর্শ

 

 ইসলামে বড়দের ও ছোটদের সম্পর্ক: করণীয় ও আদর্শ


ইসলামে পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্ককে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে বড়দের প্রতি শ্রদ্ধা এবং ছোটদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করা একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় রাখতে এবং সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে এই সম্পর্কের গুরুত্ব অপরিসীম।

বড়দের প্রতি শ্রদ্ধার গুরুত্ব

ইসলামে আমাদেরকে বড়দের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে বলা হয়েছে। তারা আমাদের জীবনের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তি, এবং তাদের জ্ঞান ও উপদেশ আমাদের পথপ্রদর্শক।

কোরআন ও হাদিসে নির্দেশনা:

১. আল্লাহ বলেন:
“তুমি তোমার পিতামাতার প্রতি সদয় আচরণ করো। যদি তাদের একজন অথবা উভয়েই তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদেরকে ‘উফ’ পর্যন্ত বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না; বরং তাদের সাথে সম্মানজনক কথা বলো।” (সূরা ইসরা: ২৩)
২. রাসূল (সা.) বলেছেন:
“যে আমাদের ছোটদের প্রতি দয়া করে না এবং বড়দের সম্মান করে না, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।” (তিরমিজি: ১৯১৯)

কীভাবে বড়দের প্রতি শ্রদ্ধা দেখাবো?

বড়দের সঙ্গে নম্রভাবে কথা বলা

তাদের সামনে উচ্চস্বরে কথা না বলা

তাদের উপদেশ ও অভিজ্ঞতাকে গুরুত্ব দেওয়া

তাদের প্রয়োজন পূরণে সাহায্য করা

তাদের জন্য দোয়া করা

ছোটদের প্রতি দয়া ও ভালোবাসার গুরুত্ব

ইসলামে ছোটদের প্রতি স্নেহ ও ভালোবাসার শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। রাসূল (সা.) শিশুদের প্রতি অত্যন্ত দয়ালু ছিলেন এবং সবসময় তাদের ভালোবাসতেন।

কোরআন ও হাদিসে নির্দেশনা:

১. রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি ছোটদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করে না এবং বড়দের সম্মান করে না, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।” (আবু দাউদ: ৪৯৪৩)
২. আনাস (রা.) বলেন,
“আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর চেয়ে শিশুদের প্রতি অধিক দয়ালু আর কাউকে দেখিনি।” (সহিহ মুসলিম: ২৩১৬)

কীভাবে ছোটদের প্রতি দয়া দেখাবো?

তাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা

তাদের সঠিক পথে পরিচালিত করা

তাদের শারীরিক ও মানসিকভাবে কষ্ট না দেওয়া

তাদেরকে ইসলামের আদব ও নীতিশিক্ষা দেওয়া

তাদের ভুল হলে ধৈর্য সহকারে সংশোধন করা

পরিবার ও সমাজে সুন্দর সম্পর্ক গঠনের উপায়

পরিবারের সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে তোলা

ছোটদের সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়া এবং বড়দের সম্মান করা

সমাজে শান্তি ও সৌহার্দ্য বজায় রাখতে ইসলামের শিক্ষা অনুসরণ করা

পারিবারিক মিলন ও একতাকে গুরুত্ব দেওয়া

উপসংহার

ইসলামে বড়দের সম্মান এবং ছোটদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি শুধু পারিবারিক বন্ধনকে সুদৃঢ় করে না, বরং সমাজকে সুন্দর ও সুশৃঙ্খল করে। আমাদের উচিত রাসূল (সা.)-এর আদর্শ অনুসরণ করে পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে এই সম্পর্কগুলোর গুরুত্ব অনুধাবন করা এবং তা বাস্তবায়ন করা।

মৃত ব্যক্তির ঋণ পরিশোধের জন্য তাড়াহুড়ো করা ওয়াজিব


 মৃত ব্যক্তির ঋণ পরিশোধের জন্য তাড়াহুড়ো করা ওয়াজিব:


তাড়াহুড়ো করে তাকে প্রস্তুত করে দাফন করা। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম صلى الله عليه وسلم বলেছেন: “মৃতকে কবরে নিয়ে যাওয়ার জন্য ত্বরা কর, কেননা সে যদি ভালো হয় তবে তা উত্তম কিছু যার দিকে তোমরা তাকে নিয়ে যাচ্ছ, আর যদি সে অন্যথায় ছিল, তবে তা খারাপ যা থেকে তোমরা নিজেদেরকে পরিত্রাণ কর।” আল-বুখারী ও মুসলিম কর্তৃক বর্ণিত।

মৃত ব্যক্তির ঋণ পরিশোধের জন্য তাড়াহুড়ো করা ওয়াজিব, তা আল্লাহর জো, যেমন যাকাত, হজ, কোনো ইবাদত করার মানত বা কাফফারা দেওয়া হোক না কেন; অথবা সেগুলি মানুষের কাছে পাওনা ছিল, যেমন নিরাপদ রাখার জন্য তার কাছে ন্যস্ত করা জিনিসগুলি ফেরত দেওয়া, যে জিনিসগুলি সে জোর করে নিয়েছিল বা যে জিনিসগুলি সে ধার করেছিল, সে সেই প্রভাবের জন্য নির্দেশ রেখেছিল বা না করেছিল। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: "মুমিনের আত্মা তার ঋণের কারণে স্থগিত থাকে, যতক্ষণ না তার পক্ষ থেকে তা পরিশোধ করা হয়।"


মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া কোন অসিয়ত সম্পাদনে তাড়াহুড়ো করা, কারণ তা ত্বরা করা

পুরষ্কার, এবং আল্লাহ তা'য়ালাকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন এবং ঋণের আগে এটি উল্লেখ করেছেন

এটি কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা তুলে ধরুন এবং লোকেদের তা করার জন্য অনুরোধ করুন।


মৃতকে গোসল করার হুকুমঃ

মৃত ব্যক্তিকে গোসল করা একটি সাম্প্রদায়িক বাধ্যবাধকতা, কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নির্দেশ দিয়েছেন, যেমনটি তিনি ইহরাম বাঁধা হাজীর বিষয়ে বলেছেন যে যখন তার উটনী তাকে ছুঁড়ে ফেলে, তার ঘাড় ভেঙ্গে মারা যায়: "তাকে পানি ও পদ্মফুল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন এবং আল-মুসলিম দ্বারা প্রদত্ত নওখরীর পাতা।

এবং তিনি তার কন্যা জয়নাব সম্পর্কে বলেন [যখন তিনি মারা যান]: "তাকে তিনবার, বা পাঁচ বা সাতবার ধুয়ে ফেলুন।>> আল-বুখারী এবং মুসলিম বর্ণনা করেছেন।

মৃত ব্যক্তিকে যেভাবে গোসল করতে হবে:

মৃত ব্যক্তিকে গোসল করার জন্য যাকে মনোনীত করা হবে তাকে এমন একজন হতে হবে যিনি বিশ্বস্ত এবং উত্তম চরিত্রের অধিকারী, যিনি গোসলের হুকুম এবং সুন্নাহ অনুযায়ী মৃত ব্যক্তিকে কীভাবে গোসল করতে হবে তা জানেন। মৃত ব্যক্তিকে গোসল করার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত পরবর্তী নিকটাত্মীয়কে, তারপর পরবর্তী নিকটতম, তারপর পরবর্তী নিকটতমকে, যেমন পিতা, দাদা ও পুত্র, যদি তারা মৃতকে গোসল করার হুকুম জানেন; অন্যথায় অন্য কাউকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত যার জ্ঞান আছে।

 আরাফা দিন: মুসলিম উম্মাহর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও বরকতময় দিন আরাফা দিবস  কী ? আরাফা দিবস হলো হিজরি বছরের ৯ জিলহজ, যেদিন হজ পালনকারীরা মক্কার ...