Showing posts with label sunnahseekers.blospot/Islamic-Life-Style. Show all posts
Showing posts with label sunnahseekers.blospot/Islamic-Life-Style. Show all posts

 আরাফা দিন: মুসলিম উম্মাহর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও বরকতময় দিন


আরাফা দিবস  কী ?



আরাফা দিবস হলো হিজরি বছরের ৯ জিলহজ, যেদিন হজ পালনকারীরা মক্কার নিকটবর্তী আরাফার ময়দানে জড়ো হন। এই দিনটি ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিন। হাদীস ও কুরআনের আলোকে এটি একটি পবিত্র, ক্ষমার দিন, রহমতের দিন এবং ইবাদতের শ্রেষ্ঠ সময়।


 কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী এর ফজিলত


কুরআন  বলছে:


"আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণ করেছি..."

(সূরা আল-মায়েদা, ৫:৩)

এই আয়াতটি আরাফার দিনেই অবতীর্ণ হয়। অর্থাৎ ইসলাম এই দিনেই পূর্ণতা লাভ করে।


 রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন:


“হজ মানেই আরাফা।” (তিরমিজি)


“আরাফার দিনের রোজা বিগত এক বছর এবং আগামি এক বছরের গুনাহ মাফ করে।” (মুসলিম)


“এই দিনে আল্লাহ সবচেয়ে বেশি মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন।” (মুসলিম)


বাড়ি থেকে আমরা কী কী করতে পারি এই দিনে?


যাঁরা হজে যাননি, তাঁরা ঘরে বসেই এই পবিত্র দিনটি ইবাদতের মাধ্যমে কাটিয়ে মহান সওয়াব অর্জন করতে পারেন। নিচে ধাপে ধাপে বলা হলো:


১.  আরাফার দিনের রোজা রাখা (সুন্নত)


যারা হজে নেই, তাদের জন্য এই রোজা রাখা সুন্নত।


এটি এক বছর আগের এবং এক বছর পরের গোনাহ মাফের কারণ।


২.  তাওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা


আল্লাহর কাছে কাঁদো কাঁদোভাবে নিজের গোনাহ মাফ চাওয়া।


সেজদায় পড়ে গিয়ে গোপনে গোপনে তাওবা করা।


৩.  জিকির ও দোয়া


এই দিন বেশি বেশি পড়ুন:


"لا إله إلا الله وحده لا شريك له، له الملك وله الحمد، وهو على كل شيء قدير"


তাসবিহ, তাহমিদ, তাকবির, তাহলীল বেশি করে বলা।


৪.  কুরআন তিলাওয়াত


অন্তত এক পারা কুরআন তিলাওয়াত করুন।


অর্থ সহ পড়লে হৃদয়ে গভীর প্রভাব পড়ে।


৫.  নফল নামাজ পড়া


সালাতুত তওবা, সালাতুল হাযাহ্ (চাহিদার নামাজ), তাহাজ্জুদ, দোহা নামাজ।


নফল ইবাদত এই দিনে অনেক গুণ বেশি সওয়াব অর্জনের সুযোগ।


৬.  পরিবারকে সম্পৃক্ত করা


পরিবারকে নিয়ে মিলেমিশে দোয়া ও ইবাদতে সময় দিন।


ছোটদের শেখান এই দিনের গুরুত্ব।


৭.  দান-সদকা


অসহায়, গরিব, প্রতিবেশীদের সাহায্য করুন।


আরাফার দিনে দান করলে তা বহুগুণ বেশি সওয়াব হয়।


রাসূলুল্লাহ ﷺ কীভাবে এই দিন পালন করেছেন?


হজের সময় তিনি আরাফার ময়দানে ছিলেন, দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে দোয়া করেছেন।


উম্মতের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন।


তিনি রোজা রাখেননি হজে থাকার কারণে, কিন্তু হজে না থাকলে রোজা রাখতে উৎসাহ দিতেন।


উপসংহার: আমরা কী শিখলাম?


আরাফার দিন নিশ্চিতভাবে আমাদের হাতে রয়েছে, যা লাইলাতুল কদরের মতো গোপন নয়।


এটি ক্ষমার দিন, মুক্তির দিন, বরকতের দিন।


ঘরে বসে এই দিন রোজা, নামাজ, দোয়া, কুরআন, জিকির, দানসহ বহু ইবাদত করে আমরা বিশাল সওয়াব অর্জন করতে পারি।



আমাদের কাজ: 

রোজা রাখা, দোয়া ও তাওবা করা, কুরআন পড়া, দান-সদকা করা, গুনাহ থেকে নিজেকে দূরে রাখা


আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই পবিত্র আরাফা দিবসের ফজিলত বুঝে আমল করার তাওফিক দিন। আমিন।

✍ লেখক: একজন সাধারন মুসলমান



আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী আল্লাহর কিতাবে অভিশপ্ত

আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি চায় তার রিযিক প্রশস্ত হোক এবং তার আয়ু বৃদ্ধি হোক, সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে।


হাদিস: আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা

আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
“যে ব্যক্তি চায় তার রিজিক প্রশস্ত হোক এবং তার আয়ু বৃদ্ধি হোক, সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে।” (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)


বাক্যাংশের ব্যাখ্যা

"তার বিধান প্রসারিত করা" মানে: বৃদ্ধি করা।
"তার রিজিক" অর্থাৎ ইহকাল ও আখেরাতে জীবিকা বৃদ্ধি।
"তার আয়ু বৃদ্ধি করা" মানে দীর্ঘ জীবন দান করা।

"আত্মীয়তার বন্ধন" শব্দটি আরবি "রহিম" থেকে এসেছে, যা আক্ষরিক অর্থে মায়ের গর্ভকে বোঝায়। এটি আত্মীয়তার সম্পর্ক বোঝাতে রূপকভাবে ব্যবহৃত হয়, কারণ আত্মীয়রা একই বংশধারা থেকে আসে।

এখানে আত্মীয় বলতে পিতা ও মাতার উভয় পক্ষের আত্মীয়দের বোঝানো হয়েছে।

আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা মানে তাদের সাথে সদয় আচরণ করা, দেখা-সাক্ষাৎ করা, তাদের খোঁজখবর নেওয়া, প্রয়োজনে সাহায্য করা এবং তাদের কল্যাণে প্রচেষ্টা চালানো।


হাদিসের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা

এই হাদিস মুসলমানদের আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখতে উদ্বুদ্ধ করে। এটি আমাদের জানায় যে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা আল্লাহর সন্তুষ্টির কারণ এবং দুনিয়াতে এটি রিজিক ও দীর্ঘ জীবন লাভের মাধ্যম।

আল্লাহ প্রত্যেক কর্মের জন্য তার উপযুক্ত ফল নির্ধারণ করেছেন। যেমন কেউ যদি আত্মীয়দের প্রতি সদয় হয়, আল্লাহ তাকে দীর্ঘ জীবন ও প্রশস্ত রিজিক দান করেন।

আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারীর শাস্তি

আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী সম্পর্কে আল্লাহর কিতাবে অভিশাপ এসেছে এবং দুনিয়াতেই তার শাস্তি ত্বরান্বিত হয়।

আলী ইবনুল হুসাইন (রহঃ) তার ছেলেকে বলেছিলেন,
“হে বৎস, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারীর সাথে তুমি কখনো বন্ধুত্ব করো না, কারণ আমি আল্লাহর কিতাবে তাকে অভিশপ্ত পেয়েছি।”

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন:
“সীমালঙ্ঘন ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার পাপের শাস্তি শুধু আখিরাতেই নয়, দুনিয়াতেও দ্রুত এসে যায়।” (তিরমিজি)


হাদিস থেকে যা শিক্ষা পাই

✅ আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা দীর্ঘ জীবনের অন্যতম উপায়।
✅ মানুষের মধ্যে সর্বোত্তম তারা, যারা দীর্ঘজীবী হয়ে সৎকর্ম করে।
✅ দীর্ঘ জীবন তখনই মূল্যবান, যখন তা সৎকাজে ব্যয় হয়।
✅ ইহকালের কল্যাণ এবং পরকালের পুরস্কার একসাথে লাভ করা সম্ভব, যদি কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হয়।

আয়ু ও রিজিক বৃদ্ধি কীভাবে সম্ভব?

কিছু মানুষ প্রশ্ন করতে পারে, “আয়ু ও রিজিক তো নির্ধারিত, তাহলে এটি কীভাবে বৃদ্ধি পাবে?”

🔹 পণ্ডিতরা বলেন, ফেরেশতাদের নিকট যা নির্ধারিত মনে হয়, তা পরিবর্তনযোগ্য, কিন্তু লাওহে মাহফুজে যা লেখা আছে, তা অপরিবর্তনীয়। অর্থাৎ, আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখলে আল্লাহর ইচ্ছায় আয়ু বৃদ্ধি পেতে পারে।
🔹 আয়ু বৃদ্ধির অর্থ হতে পারে, জীবনের বরকত বৃদ্ধি, যা ইবাদত ও কল্যাণকর কাজে ব্যবহৃত হয়।


প্রকৃত আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা কী?

একজন সত্যিকারের আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষাকারী সেই ব্যক্তি, যিনি তার আত্মীয়দের সাথে ভালো আচরণ করেন, যদিও তারা তার সাথে খারাপ ব্যবহার করে।

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন:
“আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষাকারী সে নয়, যে সদয় আচরণের প্রতিদান দেয়। বরং আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষাকারী সেই ব্যক্তি, যাকে আত্মীয়রা ছিন্ন করলেও সে তাদের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখে।” (সহিহ বুখারি)

✅ আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কাছে এসে বললঃ

“হে আল্লাহর রাসূল, আমার আত্মীয়-স্বজন আছে, যাদের সাথে আমি সম্পর্ক বজায় রাখি, কিন্তু তারা আমার সাথে তা ছিন্ন করে। আমি তাদের সাথে সদয় আচরণ করি, কিন্তু তারা আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে। আমি তাদের প্রতি সহনশীল থাকি, কিন্তু তারা আমার প্রতি অবজ্ঞাপূর্ণ আচরণ করে।”

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ

“তুমি যেমন বলছ, তাহলে এটি তাদের মুখে গরম ছাই দেওয়ার মতো। যতক্ষণ তুমি এভাবে চলবে, আল্লাহ তোমার পাশে থাকবেন।” (মুসলিম)


আল্লাহ আমাদের সকলকে আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার তাওফিক দিন এবং এই হাদিসের উপর আমল করার তাওফিক দিন। আমিন! 🤲

(সংকলন: JAD Academy)


ইফতার প্রস্তুতি: ইফতারের আগে কী করা উচিত?







ইফতার প্রস্তুতি: ইফতারের আগে কী করা উচিত?

রমজান হল সিয়াম, ইবাদত ও আত্মবিশ্লেষণের মাস, যা সারা বিশ্বের মুসলমানদের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। সূর্যাস্তের সময়, ইফতারের মুহূর্তটি অত্যন্ত প্রতীক্ষিত। তবে, ইফতারের সঠিক প্রস্তুতি নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যাতে রোজার আধ্যাত্মিক ও শারীরিক উপকারিতা সর্বাধিক হয়।

ইফতারের আগে কী করা উচিত?

দোয়া করা ও ইবাদতে মগ্ন থাকা

ইফতারের আগে দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: “রোজাদারের দোয়া ইফতারের সময় ফেরত দেওয়া হয় না।” (তিরমিজি)
তাই এই সময়ে আল্লাহর নিকট ক্ষমা, দিকনির্দেশনা ও বরকতের জন্য দোয়া করা উচিত।

সাধারণ কিন্তু পুষ্টিকর ইফতার প্রস্তুত করা

নবী (সা.) ইফতারের জন্য সহজ ও স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি সাধারণত খেজুর ও পানি দিয়ে রোজা ভাঙতেন, যা দ্রুত শক্তি পুনরুদ্ধারে সহায়ক।

অন্যদের সাথে খাবার ভাগ করে নেওয়া

ইফতারের সময় অন্যকে খাওয়ানো অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। নবী (সা.) বলেছেন: “যে ব্যক্তি রোজাদারকে ইফতার করাবে, সে তার মতোই পুরস্কার লাভ করবে, তবে রোজাদারের সওয়াব কমানো হবে না।” (তিরমিজি)
তাই পরিবারের জন্য বা অসহায় মানুষদের জন্য অতিরিক্ত খাবার প্রস্তুত করা উচিত।

অতিরিক্ত খাওয়া ও অপচয় এড়ানো

অতিরিক্ত খাওয়া তারাবিহ ও রাতের নামাজকে কঠিন করে তুলতে পারে। নবী (সা.) সবসময় মধ্যপন্থা অবলম্বন করতেন এবং পরিমিত আহারের মাধ্যমে সুস্থতা বজায় রাখতেন।

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা ও শান্ত পরিবেশ তৈরি করা

ইফতারের আগে পরিচ্ছন্ন ও শান্ত পরিবেশ বজায় রাখা মনোযোগী ও কৃতজ্ঞতার সাথে ইফতার করতে সহায়ক হয়। পরিবারের সদস্যদের একসঙ্গে ইফতার প্রস্তুতিতে অংশগ্রহণ করানো একতা ও ভালোবাসা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

পরিবারের সঙ্গে ইফতার করা

ইফতার পরিবারের সঙ্গে করা সুন্নত ও বরকতময় একটি কাজ। এটি পারিবারিক বন্ধনকে আরও দৃঢ় করে এবং একে অপরের প্রতি ভালোবাসা বৃদ্ধি করে। নবী (সা.) পরিবার ও সাহাবাদের সঙ্গে ইফতার করতেন, যা আমাদের জন্য অনুকরণীয়।

নিয়মিত দান-সদকা করা

রমজান দানের মাস, আর আল্লাহ এই মাসে দানশীল ব্যক্তিদের প্রতি বিশেষ রহমত বর্ষণ করেন। রাসূল (সা.) বলেছেন: “রোজাদারদের খাওয়ানো, অভাবীদের সাহায্য করা এবং দান করা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ কাজ।” (বুখারি)
গরীব ও দুস্থদের সহায়তা করা, মসজিদে অনুদান দেওয়া, এবং যাদের প্রয়োজন তাদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া আমাদের কর্তব্য।

রাসূল (সা.) কিভাবে ইফতারের প্রস্তুতি নিতেন?

নবী মুহাম্মাদ (সা.) সহজ ও স্বাস্থ্যকর রুটিন অনুসরণ করতেন:

  • খেজুর ও পানি দিয়ে রোজা ভাঙতেন।
  • মাগরিবের নামাজ আদায় করার পর মূল খাবার গ্রহণ করতেন।
  • অতিরিক্ত খাবার পরিহার করতেন, পরিমিত আহার করতেন।
  • আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতেন খাবারের জন্য।
আমাদের প্রিয় নবী (সা.)-এর সুন্নাহ অনুসরণ করে আমরা ইফতারকে আরও তাৎপর্যপূর্ণ ও কল্যাণকর করতে পারি।


আল্লাহ যেন আমাদের সকল ইবাদত কবুল করেন এবং এই রমজানকে বরকতময় করেন। আমিন!

রাগ নিয়ন্ত্রণ ও ধৈর্যধারণ: ইসলামের নির্দেশনা

 রাগ নিয়ন্ত্রণ ও ধৈর্যধারণ: ইসলামের নির্দেশনা




ইসলাম আমাদের নৈতিক উন্নতি ও আত্মনিয়ন্ত্রণ শেখায়। রাগ একটি স্বাভাবিক মানবিক অনুভূতি, তবে এটি সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা গুরুত্বপূর্ণ। কুরআন ও হাদিসে রাগ নিয়ন্ত্রণ ও ধৈর্যধারণের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

রাগ নিয়ন্ত্রণের গুরুত্ব

রাগের ফলে আমরা প্রায়ই ভুল সিদ্ধান্ত নেই, যা আমাদের পারিবারিক, সামাজিক ও কর্মজীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন:

"শক্তিশালী সেই ব্যক্তি নয় যে কুস্তিতে অপরকে পরাস্ত করে, বরং প্রকৃত শক্তিশালী সে-ই যে রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।" (বুখারি, মুসলিম)

রাগ নিয়ন্ত্রণের ইসলামিক উপায়

১. আউযুবিল্লাহ পড়া:

  • রাগ উঠলে "আউযুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম" পড়তে বলা হয়েছে।
  • এটি আমাদের অন্তরে শয়তানের প্রভাব কমায় এবং আত্মনিয়ন্ত্রণ বাড়ায়।

২. নীরব থাকা:

  • রাসূল (সাঃ) বলেছেন, "তোমাদের মধ্যে কেউ রাগ করলে সে যেন চুপ থাকে।" (আহমাদ)
  • নীরবতা রাগের সময় অপ্রয়োজনীয় কথা বলা থেকে রক্ষা করে।

৩. অবস্থান পরিবর্তন করা:

  • রাসূল (সাঃ) বলেছেন, "যদি তোমাদের কেউ রেগে যায় এবং দাঁড়িয়ে থাকে, তবে সে যেন বসে যায়। যদি তাতেও রাগ না কমে, তবে শুয়ে পড়ুক।" (আবু দাউদ)
  • এটি শারীরিক ও মানসিক চাপ কমিয়ে দেয়।

৪. অজু করা:

  • হাদিসে বলা হয়েছে, "নিশ্চয়ই রাগ শয়তানের পক্ষ থেকে আসে, আর শয়তান আগুন থেকে সৃষ্টি। তাই তোমাদের কেউ রাগ করলে সে যেন ওজু করে।" (আবু দাউদ)
  • ঠান্ডা পানি রাগ প্রশমিত করে।

৫. ধৈর্যধারণ করা:

  • আল্লাহ বলেন, "নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।" (সুরা বাকারা: ১৫৩)
  • ধৈর্য আমাদের অন্তরে প্রশান্তি এনে দেয় এবং ন্যায়ের পথে থাকতে সাহায্য করে।

ধৈর্যধারণের গুরুত্ব ও উপায়

১. ধৈর্যের মাধ্যমে জান্নাত লাভ:

  • "নিশ্চয়ই ধৈর্যশীলদের প্রতিদান তাদের কর্মের চেয়েও উত্তম।" (সুরা যুমার: ১০)

২. নামাজ ও দোয়া: 

  • আল্লাহ বলেন, "হে মুমিনগণ! তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য চাও।" (সুরা বাকারা: ১৫৩)

৩. পরিস্থিতিকে আল্লাহর পরীক্ষা মনে করা:

  • রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, "মুমিনের অবস্থা আশ্চর্যজনক! সে যদি কষ্ট পায়, তবে ধৈর্য ধরে এবং আল্লাহ তাকে পুরস্কৃত করেন।" (মুসলিম)

উপসংহার

রাগ নিয়ন্ত্রণ করা এবং ধৈর্য ধারণ করা একজন মুসলিমের জন্য অপরিহার্য গুণ। কুরআন ও হাদিসের শিক্ষা অনুযায়ী চললে আমরা আত্মনিয়ন্ত্রণ ও ধৈর্যের মাধ্যমে দুনিয়া ও আখিরাতে সফল হতে পারবো। আল্লাহ আমাদের সকলকে রাগ নিয়ন্ত্রণ ও ধৈর্যধারণের শক্তি দান করুন। আমিন।

 আরাফা দিন: মুসলিম উম্মাহর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও বরকতময় দিন আরাফা দিবস  কী ? আরাফা দিবস হলো হিজরি বছরের ৯ জিলহজ, যেদিন হজ পালনকারীরা মক্কার ...