আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি চায় তার রিযিক প্রশস্ত হোক এবং তার আয়ু বৃদ্ধি হোক, সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে।
হাদিস: আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা
আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
“যে ব্যক্তি চায় তার রিজিক প্রশস্ত হোক এবং তার আয়ু বৃদ্ধি হোক, সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে।” (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)
বাক্যাংশের ব্যাখ্যা
"তার বিধান প্রসারিত করা" মানে: বৃদ্ধি করা।
"তার রিজিক" অর্থাৎ ইহকাল ও আখেরাতে জীবিকা বৃদ্ধি।
"তার আয়ু বৃদ্ধি করা" মানে দীর্ঘ জীবন দান করা।
"আত্মীয়তার বন্ধন" শব্দটি আরবি "রহিম" থেকে এসেছে, যা আক্ষরিক অর্থে মায়ের গর্ভকে বোঝায়। এটি আত্মীয়তার সম্পর্ক বোঝাতে রূপকভাবে ব্যবহৃত হয়, কারণ আত্মীয়রা একই বংশধারা থেকে আসে।
এখানে আত্মীয় বলতে পিতা ও মাতার উভয় পক্ষের আত্মীয়দের বোঝানো হয়েছে।
আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা মানে তাদের সাথে সদয় আচরণ করা, দেখা-সাক্ষাৎ করা, তাদের খোঁজখবর নেওয়া, প্রয়োজনে সাহায্য করা এবং তাদের কল্যাণে প্রচেষ্টা চালানো।
হাদিসের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা
এই হাদিস মুসলমানদের আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখতে উদ্বুদ্ধ করে। এটি আমাদের জানায় যে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা আল্লাহর সন্তুষ্টির কারণ এবং দুনিয়াতে এটি রিজিক ও দীর্ঘ জীবন লাভের মাধ্যম।
আল্লাহ প্রত্যেক কর্মের জন্য তার উপযুক্ত ফল নির্ধারণ করেছেন। যেমন কেউ যদি আত্মীয়দের প্রতি সদয় হয়, আল্লাহ তাকে দীর্ঘ জীবন ও প্রশস্ত রিজিক দান করেন।
আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারীর শাস্তি
আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী সম্পর্কে আল্লাহর কিতাবে অভিশাপ এসেছে এবং দুনিয়াতেই তার শাস্তি ত্বরান্বিত হয়।
আলী ইবনুল হুসাইন (রহঃ) তার ছেলেকে বলেছিলেন,
“হে বৎস, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারীর সাথে তুমি কখনো বন্ধুত্ব করো না, কারণ আমি আল্লাহর কিতাবে তাকে অভিশপ্ত পেয়েছি।”
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন:
“সীমালঙ্ঘন ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার পাপের শাস্তি শুধু আখিরাতেই নয়, দুনিয়াতেও দ্রুত এসে যায়।” (তিরমিজি)
হাদিস থেকে যা শিক্ষা পাই
✅ আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা দীর্ঘ জীবনের অন্যতম উপায়।
✅ মানুষের মধ্যে সর্বোত্তম তারা, যারা দীর্ঘজীবী হয়ে সৎকর্ম করে।
✅ দীর্ঘ জীবন তখনই মূল্যবান, যখন তা সৎকাজে ব্যয় হয়।
✅ ইহকালের কল্যাণ এবং পরকালের পুরস্কার একসাথে লাভ করা সম্ভব, যদি কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হয়।
আয়ু ও রিজিক বৃদ্ধি কীভাবে সম্ভব?
কিছু মানুষ প্রশ্ন করতে পারে, “আয়ু ও রিজিক তো নির্ধারিত, তাহলে এটি কীভাবে বৃদ্ধি পাবে?”
🔹 পণ্ডিতরা বলেন, ফেরেশতাদের নিকট যা নির্ধারিত মনে হয়, তা পরিবর্তনযোগ্য, কিন্তু লাওহে মাহফুজে যা লেখা আছে, তা অপরিবর্তনীয়। অর্থাৎ, আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখলে আল্লাহর ইচ্ছায় আয়ু বৃদ্ধি পেতে পারে।
🔹 আয়ু বৃদ্ধির অর্থ হতে পারে, জীবনের বরকত বৃদ্ধি, যা ইবাদত ও কল্যাণকর কাজে ব্যবহৃত হয়।
প্রকৃত আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা কী?
একজন সত্যিকারের আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষাকারী সেই ব্যক্তি, যিনি তার আত্মীয়দের সাথে ভালো আচরণ করেন, যদিও তারা তার সাথে খারাপ ব্যবহার করে।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন:
“আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষাকারী সে নয়, যে সদয় আচরণের প্রতিদান দেয়। বরং আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষাকারী সেই ব্যক্তি, যাকে আত্মীয়রা ছিন্ন করলেও সে তাদের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখে।” (সহিহ বুখারি)
✅ আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কাছে এসে বললঃ
“হে আল্লাহর রাসূল, আমার আত্মীয়-স্বজন আছে, যাদের সাথে আমি সম্পর্ক বজায় রাখি, কিন্তু তারা আমার সাথে তা ছিন্ন করে। আমি তাদের সাথে সদয় আচরণ করি, কিন্তু তারা আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে। আমি তাদের প্রতি সহনশীল থাকি, কিন্তু তারা আমার প্রতি অবজ্ঞাপূর্ণ আচরণ করে।”
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ
“তুমি যেমন বলছ, তাহলে এটি তাদের মুখে গরম ছাই দেওয়ার মতো। যতক্ষণ তুমি এভাবে চলবে, আল্লাহ তোমার পাশে থাকবেন।” (মুসলিম)
আল্লাহ আমাদের সকলকে আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার তাওফিক দিন এবং এই হাদিসের উপর আমল করার তাওফিক দিন। আমিন! 🤲
(সংকলন: JAD Academy)